টাঙ্গাইল পৌরউদ্যানের চা বিক্রেতা লিয়াকত আলী। তার ছোট দোকানে প্রতিদিন ৪শ কাপ চা বিক্রি করেন। করোনার ঢেউ শুরু হতেই বদলে যায় চায়ের কাপ। প্রতিদিন প্রায় ২শ পিস ওয়ান টাইম প্লাস্টিক গ্লাসের প্রয়োজন হয় তার। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন টাঙ্গাইল পৌর এলাকাতেই প্রায় দুই শতাধিক চায়ের দোকানে অন্ততপক্ষে ৩০ হাজারের পিসেরও বেশি ওয়ান টাইম প্লাস্টিক কাপ লাগে। এই বিপুল পরিমান প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনছে। পচনশীল না হওয়ায় ড্রেন, নালা ও নদীতে গিয়ে পড়ে পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

তৈরি করছে জলাবদ্ধতা। এছাড়া খোলা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব কাপে জমে থাকছে বৃষ্টির পানি। যা ডেঙ্গু মশার প্রজননের জন্য সহায়ক ক্ষেত্র। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে অপারকতা প্রকাশ করেছে জেলা পরিবেশ ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। অপর দিকে এ বিষয়ে জানে না জেলা প্রশাসন। মানবদেহের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর এসব নিম্নমানের প্লাস্টিক। এই মানহীন প্লাস্টিকরোধে কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই বললেই চলে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসব বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টাঙ্গাইল শহরের ছয়আনী বাজারের সোহাগ ওয়ান টাইম প্রোডাক্টসের প্রোপাইটার আব্দুল লতিফ বলেন, প্রতিদিন ৫০ হাজারের মতো প্লাস্টিক চায়ের কাপ বিক্রি হয়।

গত মাসে যখন করোনারভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ছিলো তখন আরো বেশি বিক্রি হয়েছে। Poland aero Copy video url Play / Pause Mute / Unmute Report a problem Language Mox Player ADVERTISEMENT সোহাগ ওয়ান টাইম প্রোডাক্টস্ এর মতো টাঙ্গাইল শহরে আরো দুই ডজন দোকান রয়েছে। এসব দোকানের মানহীন প্লাস্টিক ফুড গ্রেড কাপ জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বাসাবাড়ি, চায়ের দোকান, অফিস ও মনোহারি দোকানেসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, প্লাস্টিকের কাপে চা খাওয়া উচিৎ নয়। প্লাস্টিকের মধ্যে অনেক ধরনের ইনভেরিয়েন্ট আছে।

যাতে গরম পানি পড়লে সহজেই গলে যায়। এ গুলো শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন অর্গানের ক্ষতি করে। সুস্থতার জন্য এসব নিম্নমানের কাপ ব্যবহার না করাই ভাল। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল আলম (রসায়নবিদ) বলেন, প্লাস্টিকের বোতলে বিসফেনল-এর ব্যবহার করা হয়। বিসফেনল এক ধরনের বিষ যা ক্যান্সার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মেয়েদের ফার্টিলিটি কমিয়ে দাওয়াসহ অন্যান্য রোগের সৃষ্টি করে। এছাড়া অনেক সময় পলিপ্রোপাইলিন বা পলিইথাইলিন দিয়ে তৈরি করা হয়। যা গরম পানি দিলে সহজেই বিক্রিয়া শুরু হয়। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা (ইএসআরএম) বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ওয়ানটাইম মাইক্রো প্লাস্টিকের কাপগুলো একবার ব্যবহারের পর মাটিতে গিয়ে একটি স্তর তৈরি করে।

পচনশীল না হওয়ায় মাটির ভিতরে পানি প্রবেশ করতে পারে না। দীর্ঘ সময় লাগে ব্রেক ডাউন হতে। মাটির গুণাগুণ ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করায় উদ্ভিদসহ অন্যান্য প্রাণী জন্মাতে পারে না। আবার পানিতে গিয়েও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। এসব মাছের পাকস্থলীর ভেতর থাকায় আমরা যখন মাছ খাই তখন সেই মাইক্রো প্লাস্টিক আমাদের শরীরেও প্রবেশ করে। এসব কাপ পানিতে থাকাকালীন সময়ে পানির উপরে বিশাল স্তর তৈরি করে ফেলে। টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহারের পরে আমরা ফেলে দেই। এটি পচনশীল নয়। বেশি দিন মাটিতে থাকলেও পচে না।

মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে দেয়। ড্রেনে গিয়েও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল প্রতিষ্ঠান ছাড়া আমরা অন্য কোন বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি না। টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইফতেখারুল আলম রেজভী বলেন, আইনগতভাবে এসব প্লাস্টিকের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিতে পারেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের এ বিষয়ে অবগত করা হবে।